মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে টানা সতেরো দিনের মতো আন্দোলন করছেন সারাদেশ থেকে আগত শিক্ষকরা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়ে দেয়া বক্তব্যে এক শিক্ষক নেতা বলেছেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীকে আর আমলে নেয়া হবে না। একই সাথে স্কুলে উপস্থিত থাকতে যত কঠোর নির্দেশনাই দেওয়া হোক না কেন জাতীয়করণ ঘোষণা না করা পর্যন্ত তাঁরা সেই নির্দেশনা মানবেন না।’
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) ব্যানারে সারাদেশ থেকে আগত শিক্ষকরা এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে।
অবস্থান কর্মসূচিতে বিভিন্ন সংগ্রামী গান ও কবিতা দিয়ে নিজেদের দাবি তুলে ধরছেন এবং তা বাস্তবায়নে নানান হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষামন্ত্রীকে ডা. দিপু মনিকে উদ্দেশ্য করে শিক্ষক নেতারা বলেছেন, ‘আপনি কোন সমাধান দিয়ে বিভিন্ন প্রজ্ঞাপন দিচ্ছেন, আমরা এসব প্রজ্ঞাপনের তোয়াক্কা করি না। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড, দেশের মেরুদন্ড ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রীকে আর আমলে নেয়া হবে না উল্লেখ করে শিক্ষক নেতারা আরও বলেন, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাথে দেখা করতে চাই। উনার সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়া আমরা প্রেসক্লাব ছাড়বো না। তিনি আমাদের যে সমাধান দেবেন সেটি মেনে নিয়ে আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবো।
এর আগে গত ১১ জুলাই (মঙ্গলবার) থেকে আন্দোলন শুরু করেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। আজ চলছে আন্দোলনের সতেরো তম দিন। এদিনেও কোনো সমাধান পায়নি আন্দোলনকারীরা। তবে শিক্ষকরা বলছেন— দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ মাত্র ২৫% উৎসব ভাতা, ১,০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। তাছাড়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে প্রদান করা হয় এবং সহকারি প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল প্রদান না করার ফলে উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সহকারি প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান হওয়ায় প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারি প্রধানদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে বছরের পর বছর উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতীকি অনশন, অবস্থান ধর্মঘট, কর্মবিরতিসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর নিকট বারবার স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
তাঁরা জানান, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাবার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক/কর্মচারী টাকা পাওয়ার পূর্বেই অর্থাভাবে বিনা চিকৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। তাছাড়া কয়েক বছর যাবৎ কোন প্রকার সুবিধা না দিয়েই অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪% কর্তন করা হচ্ছে যা অত্যন্ত অমানবিক। তাই অতিরিক্ত ৪% কর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট অফিস ঘেরাও করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু অদ্যাবধি কোন প্রতিকার পাননি।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান মিয়া জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে একটি যুদ্ধবিধস্ত দেশে প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমকি বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে বঙ্গবন্ধু তনায়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে জাতির কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন। এমতাবস্থায় দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে দ্রুত জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়ন, শিক্ষায় বিনিয়োগে ইউনেস্কো-আইএলও’র সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন এবং সবার জন্য শিক্ষা গ্রহণের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীগণ লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।