close(x)
 

আইসিইউতে আয়েশা ‘খুঁজছে মাকে’, কথা বলেছে সুমাইয়া

by দেশজুড়ে Published: August 4, 2023 ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু আয়েশা

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শক সিনড্রোম হওয়া ছোট্ট আয়েশা তিন দিন ধরে ঢাকা শিশু হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছে। ৩ মাস ২৪ দিন বয়সী আয়েশাকে আইসিইউতে দেখতে যেতে তার মা–বাবার জন্যও সময় নির্ধারণ করা আছে। সেই সময় অনুযায়ী মেয়েকে দেখে আসছেন মা-বাবা।

আয়েশা ঢাকা শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক প্রবীর কুমার সরকারের পর্যবেক্ষণে আছে। আজ শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে প্রবীর কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডেঙ্গু শকের পর আয়েশার হৃদ্‌যন্ত্রে জটিলতা দেখা দিয়েছিল। পরীক্ষা করা হয়েছে। সার্বিকভাবে শিশুটির পরিস্থিতি ধীরে হলেও উন্নতির দিকে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। একই গতিতে চললে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে আশা করা যায়।’

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে আয়েশার বাবা আনসারুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়েকে দেখতে কয়েকবার ওর মা আইসিইউর ভেতরে গেছে। মেয়ে একটু সাড়া দিতেছে। খিদা লাগলে মাঝেমধ্যে সে তাকায়, মনে হয় মারে খোঁজে।’

চিকিৎসকও বলেছেন, ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে সম্পূর্ণ অচেতন হয়ে পড়া ছোট্ট শিশুটির শারীরিক অবস্থা এখন উন্নতির দিকে। শক সিনড্রোমের অর্থ হচ্ছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তির রক্তচাপ অতি দ্রুত কমে যায়, রক্তে অণুচক্রিকার পরিমাণ কমে যায় এবং রোগীর পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হয়ে পড়ে, রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আয়েশাকে গত ৩০ জুলাই ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১ আগস্ট থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। টাকার অভাবে স্বজনেরা তাকে আইসিইউতে নিতে পারছিলেন না। সেদিনই প্রথম আলোর অনলাইনে ‘চোখ খুলছে না আয়েশা, টাকার অভাবে আইসিইউতে নিতে পারবে না পরিবার’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর অনেকেই সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসেন। সেদিন রাতেই আইসিইউতে নেওয়া হয় ছোট্ট আয়েশাকে।

গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটা থেকে আয়েশা আইসিইউতে আছে। বুধবার দিনের বেলাতেও আয়েশার অবস্থা একই রকম ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আয়েশার ফুফু তানজিলা আক্তার প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তাঁর ভাতিজির হৃদ্‌যন্ত্রে সমস্যা হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

-ADVERTISEMENT-
Ads by

কথা বলেছে সুমাইয়া
‘চোখ খুলছে না আয়েশা, টাকার অভাবে আইসিইউতে নিতে পারবে না পরিবার’ শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৩ বছর বয়সী সুমাইয়ার কথাও উঠে এসেছিল। ডেঙ্গু আক্রান্ত সুমাইয়ার শরীরে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছিল। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে সুমাইয়ার বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের হানির আশঙ্কা ছিল। ঢাকা শিশু হাসপাতালে আইসিইউ না পেয়ে তাকে রাজধানীর উত্তরায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যান তার বাবা।

প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দুই শিশুর চিকিৎসার সব দায়িত্ব নেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। শিশু হাসপাতালে থাকা আয়েশার দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসে অনেক সাধারণ মানুষও। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের পক্ষ থেকেও আয়েশার দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানানো হয়। এখন ডেঙ্গু আক্রান্ত দুই শিশুরই চিকিৎসা চলছে আইসিইউতে।

সুমাইয়ার বাবা আনোয়ার শেখ ছোট্ট একটি চায়ের দোকান চালান। আজ দুপুরে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আইসিইউর ভিতর দেখতে গেছিলাম। সুমাইয়া তাকায়া বলছে, আব্বা খিচুড়ি খাব। ডাক্তারের অনুমতি নিয়া ওরে খিচুড়ি খাওয়াইছি। তবে পানি দিয়া মিশায় খাওয়াইছি, পাতলা কইরা। আমার মেয়ে সুস্থ হইতেছে ইনশা আল্লাহ।’

সুমাইয়ার রক্তের অণুচক্রিকা গত মঙ্গলবার ৩৩ হাজারে নেমেছিল। আজ সকালে তা আবার বেড়ে ১ লাখ ১০ হাজার হয়েছে বলে জানান আনোয়ার শেখ।

আয়েশার বাবা আনসারুল হক ও সুমাইয়ার বাবা আনোয়ার শেখ সবার কাছে তাঁদের সন্তানদের জন্য দোয়া চেয়েছেন।