ঢাকায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর ‘শান্তি সমাবেশ’ শেষে দুপক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে ছুরিকাঘাতে মাদ্রাসাছাত্র নিহতের পর দুদিন গড়ালেও অপরাধী কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ; এই ঘটনায় দায়ের করা মামলাতেও কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।
শুক্রবার গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজারের কাছে ‘আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীদের’ মারামারির মধ্যে রেজাউল করিমসহ পাঁচজন ছুরিকাহত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর দায়িত্বরত চিকিৎসক রেজাউলকে মৃত ঘোষণা করেন।
রোববার তার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিহতের চাচা আজহারুল ইসলাম বলেন, রাতে শেরপুরের নকলা উপজেলার নারায়ণকোটা গ্রামের বাড়ির পাশের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
এই ঘটনায় নিহতের বোন পল্টন থানায় মামলা করেছেন জানিয়ে আজহারুল বলেছেন, “মামলায় কারও নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়নি। তবে আমরা বিচার চাই। আমাদের নিরীহ অসুস্থ ছেলেটারে যারা এইভাবে মারল, তাদের বিচারের ভার আমি আপনাদের ওপর ছাইড়া দিতেছি।”
দাফন শেষে ঢাকা ফিরে কিছু বলবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের কিছু বলার আছে।”
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম বলছেন, “আমরা এই ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি। সিসি টিভির ভিডিও পর্যবেক্ষণ চলছে।
“সেদিন প্রচুর লোক ছিল, লাখ লাখ লোক। এর মধ্যেই ঘটনাটি ঘটেছে। আমর সিসি ক্যামেরার ভিডিও ধরে অপরাধীদের খুঁজে বের করার চেষ্ট করছি।”
রেজাউল নকলা থেকে হাফেজি পড়া শেষে দুই বছর ধরে যাত্রাবাড়ীর একটি মাদ্রাসায় দাওরায় হাদিসে পড়ছিলেন। শুক্রবার শান্তি সমাবেশ পরবর্তী সংঘর্ষে দুই উরুতে ছুরিকাঘাতের শিকার হন রেজাউল।
সংঘর্ষের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শান্তি সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীরা যখন ফিরে যাচ্ছিলেন, তখনই ঢাকা- ২ আসনের সংসদ সদস্য কামরুল ইসলাম এবং কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের সমর্থকরা মারামারিতে জড়ায়।
গুলিস্তানে নিহত তরুণ ‘ওষুধ কিনতে বেরিয়েছিলেন’, পড়তেন মাদ্রাসায়
ওই সংঘর্ষের পর কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ দাবি করেন, যারা আহত হয়েছেন, তারা তার অনুসারী। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, তার কোনো কর্মী ওই মারামারিতে জড়িত ছিল না।
হেফাজতের বিবৃতি
রোববার হেফাজতে ইসলাম সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে রেজাউল হত্যার বিচার দাবি করেছে।
দলটির আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজিদুর রহমান ওই বিবৃতিতে বলেন, “যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের শান্তি সমাবেশে দুপক্ষের সংঘর্ষে হাফেজ রেজাউল করিম নামের এক কওমী মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
“সে যাত্রাবাড়ী জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া মাদ্রাসার ছাত্র। নিহত হাফেজ রেজাউল করিম হত্যাকাণ্ডের সময় অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিল। সে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কোনরূপ যুক্ত ছিল না।”
নেতারা অনতিবিলম্বে হাফেজ রেজাউল হত্যায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান; পাশাপাশি তারা নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।