রাজধানীতে চলছে নগর পরিবহনের ২২ নম্বর রুটের একটি বাসের সঙ্গী হয় সময় সংবাদ। গন্তব্য ঘাটারচর-মোহাম্মদপুর-কারওয়ানবাজার-যাত্রাবাড়ি হয়ে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত। বাসস্ট্যান্ড থেকে একে একে ছেড়ে যাচ্ছে প্রতিটি বাস। তবে নেই যাত্রীর দেখা। রাজধানীতে গণপরিবহনের এমন চিত্র বিরল। একই রুটের অন্যান্য বাসে যাত্রী ঠাসা থাকলেও খালি নগর পরিবহন। এমন চিত্র বাসে উঠে দেখো গেছে।
যাত্রীরা জানান, প্রথমে অনেকগুলো বাস দিয়ে শুরু হলেও দিনে দিনে কমেছে বাসের সংখ্যা। ফলে যাত্রীদের আস্থা হারাচ্ছে এ সেবা। বাসস্ট্যান্ডে গিয়েই সত্যতা মিললো এ অভিযোগের। এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে এ রুটে দেখা মিলেছে মাত্র একটি বাসের।
আরেক যাত্রী জানান, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম বাস কাউন্টারে, কিন্তু সেখান থেকে বলা হলো এখন আর এটির কোনো কাউন্টার নেই। যেকোনো জায়গাতে দাঁড়ালে বাস পাওয়া যাবে। এই গাড়ির সংখ্যা বাড়ালে আমাদের মতো যারা প্রতিনিয়ত গাড়িতে যাতায়াত করছে; তাদের ভোগান্তিটা কমবে।
নগর পরিবহনের এক চালক জানান, প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা আমাকে জমা দিতে হয়। সেই টাকা যদি আমি তুলতে না পারি, তাহলে কিভাবে গাড়ি চালাবো?
এরই মধ্যে নগর পরিবহনের সঙ্গে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে সহযোগী বাস কোম্পানি হানিফ পরিবহন।
এবার নগর পরিবহনের বাস ডিপোতে যায় সময় সংবাদ। এখানে দেখা গেলো আরো ভয়াবহ চিত্র। কাগজে কলমে নগর পরিবহন হলেও অনেক বাসই অবৈধভাবে চষে বেড়াচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, বাসরুট সমন্বয় না করেই এ সার্ভিস চালু করায় যাত্রী সংকটে লোকসান গুনছে নগর পরিবহন।
বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটির সদস্য এস এম সালেহ উদ্দিন সম্প্রতি সময় সংবাদকে বলেন, আমরা এই রুটে ৫০টি গাড়ি চালানোর জন্য হানিফ পরিবহনকে অনুমতি দিয়ে দিয়েছি। তারা ৫০টি গাড়ির জায়গায় ৩০টি দিয়ে শুরু করতে গিয়ে দেখে, ইনকাম হচ্ছে না। তখন এমন পরিস্থিতি হয়েছে। যে নিয়ম অনুসারে গাড়িগুলো চালানোর কথা বলা হয়েছিল, সেই নিয়ম অনুসারে যাত্রী নিতে পারছে না তারা। আবার অবৈধভাবে যারা গাড়ি চালাচ্ছে, তারা এখানে এসে পড়ছে। এ নিয়ে একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, বাসরুট পুনর্বিন্যাস আর মালিকপক্ষের সিন্ডিকেট না ভাঙলে ভেস্তে যাবে র্যাশনালাইজেশনের সব পরিকল্পনা।
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগ করার জন্য অনেকে বসে আছে, তবে সংশ্লিষ্টদের নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, এই রুটে অন্যান্য যেসব বাস বা অবৈধ বাসগুলো চলছে সেগুলো তুলে দিতে হবে। সেটা তুলতে গেলে, মধ্যস্বত্বভোগী থেকে অনেকে এখানে অনেক সুবিধা পাচ্ছে, সেই সিন্ডিকেটটা ভাঙতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের দায়সারা জবাব, রুট পারমিটবিহীন বাসগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার প্রক্রিয়া চলছে। নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বিআরটিএ এবং ট্রাফিক বিভাগকেও।
মেয়র আতিক জানান, আমরা যখন এলাকা পরিদর্শনে যাই তখন কিন্তু অন্যান্য বাস থাকে না। কিন্তু কিছু কিছু রুটে দেখা যাচ্ছে অন্যান্য বাস চলাচল করছে। তবে নির্দেশনা দেয়া আছে, যাদের রুট পারমিট নেই তারা এই রুটে চলতে পারবে না।
এখন শৃঙ্খলা ফেরাতে এমন বিশৃঙ্খল গণপরিবহন থেকে মুক্তি চান নগরবাসী।