ঢাকা–১৭ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের যে কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন, ওই কেন্দ্রে আজ সোমবার ভোট গ্রহণ শুরুর পর সকাল ৯টা পর্যন্ত ভোটের হার ছিল শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ। দুপুর পৌনে ১২টায় তা দাঁড়ায় ৩ শতাংশে। বেলা দুইটার পর নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারীরা কেন্দ্রে প্রবেশে করেন। এরপর বেলা সোয়া তিনটায় দেখা যায়, সেখানে ভোট গ্রহণের হার বেড়ে ১০ শতাংশ হয়েছে।
গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভেতরে আজ মোট পাঁচটি কেন্দ্রে ভোট হয়। এর মধ্যে ৬৩ নম্বর কেন্দ্রে ভোট দেন মোহাম্মদ এ আরাফাত। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৫৮৮ জন। সকাল ৮টায় ভোট শুরুর পর ৯টা পর্যন্ত সেখানে ভোট পড়ে মাত্র ১৬টি। দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত ভোট দেন ৮৩ জন। আর বেলা তিনটার দিকে এই সংখ্যা হয় ২৭৮।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই কেন্দ্রগুলোর সামনে কোনো লাইন নেই। যাঁরাই ভোট দিতে আসছেন, তাঁদের কোনো অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন। আর নৌকার ব্যাজধারী যেসব ব্যক্তি সকাল থেকে গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে অবস্থান করছিলেন, তাঁরা কেন্দ্রে প্রবেশ শুরু করেন বেলা দুইটার পর থেকে। তিন থেকে চারজনের দলে ভাগ হয়ে এসব ব্যাক্তি কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। ভোট দিয়ে তাঁরা ফিরে যান।
কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে নৌকার কয়েকজন পোলিং এজেন্টকে ‘খাবার লাগবে’ বলে ফোন করতে দেখা যায়। পরে দুজন–তিনজন করে খাবার নিয়ে কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করেন। ওই ব্যক্তিদেরও ভোট দিতে দেখা গেছে।
গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদৌস কবির ৬৩ নম্বর কেন্দ্রে দলটির প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন। জাল ভোটের বিষয়ে জানতে চাইলে ভোট গ্রহণ শেষে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরাফাত এ রহমান এই কেন্দ্রের ভোটার ছিলেন। তাই এই কেন্দ্র তাঁর জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল।
নৌকার ব্যাজধারী নেতা–কর্মীদের এই কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশের কারণে সেখানে অন্য চার কেন্দ্রের চেয়ে ভোট বেশি পড়েছে—প্রতিবেদকের এসব কথা শুনে মুচকি হেসে ফেরদৌস কবির বলেন, এটা কোথায় না হয়, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তো এটা হয়। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের কারণে তাঁরা পুরোপুরি নিজেদের মতো কাজ করতে পারেননি বলে জানান তিনি।
কেন্দ্র থেকে ভোট দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় প্রবীণ এক ভোটার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভেতরে তো সব নৌকার লোক। তাঁরা নিজেদের মতো করে যা করার তা–ই করছেন।’ নৌকার ব্যাজধারীদের জাল ভোট দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি খেয়াল করিনি।’
গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাকি চারটি কেন্দ্রের মধ্যে একটি কেন্দ্রে (৬৪ নম্বর) বেলা ৩টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ২৬০টি। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৫৮৯ জন। ভোটের হার ১০ শতাংশ। এই কেন্দ্রে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছিল ১৪৮টি। সকাল ৮টায় ভোট শুরুর পর ৯টা পর্যন্ত ভোট পড়ে ২০টি।
গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আরেকটি কেন্দ্রের (৬৫ নম্বর) মোট ভোটার ছিলেন ২ হাজার ৫৩৯ জন। বেলা ৩টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন ১১৬ জন। ভোটের হার ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। দুপুর ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রটিতে ভোট দিয়েছিলেন ৪৫ জন। তখন ভোটের হার ছিল ২ শতাংশ।
একই স্থানে অবস্থিত আরেকটি কেন্দ্রে (৬৬ নম্বর) বেলা ৩টা পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন ৯০ জন। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ১২৯ জন। ভোটের হার ছিল ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আরেকটি কেন্দ্রে (৬৭ নম্বর) বেলা ৩টা পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন ৯০ জন। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৫৮ জন। ভোটের হার ২ ছিল ৯৪ শতাংশ।
গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মোট ৫টি কেন্দ্রে ভোটার ১৩ হাজার ৯০৩ জন। বেলা তিনটা পর্যন্ত এই পাঁচটি কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন ৮৩৪ জন। ভোট গ্রহণের হার ৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ।