রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) গরিব মানুষকে ‘তাড়িয়ে’ দিয়ে বড়লোকদের আরও বড়লোক বানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তাঁর মতে, প্লট বরাদ্দের মাধ্যমে রাজউক এ কাজ করেছে।
আজ শনিবার অধ্যাপক আদনান জিল্লুর মোর্শেদের ‘ঢাকা ডেলিরিয়াম’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।
বইয়ের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে ‘পারস্পেকটিভ অন সাউথ এশিয়ান আরবানিজম’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, রাজউক নগর উন্নয়ন কতটা করেছে, কতটা গরিব তাড়িয়েছে, তা চিন্তার বিষয়। গরিব তাড়িয়ে, অল্প দামে জমি দিয়ে বড়লোকদের বড়লোক বানিয়েছে। মার্কেট, কমিউনিটি সেন্টার বানিয়ে ভাড়া দিয়ে খাচ্ছে।
‘আমরা এখন ঢাকার প্রলাপ শুনছি’ উল্লেখ করে এম এ মান্নান বলেন, ‘নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে শহরটা অসুস্থ, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছে। তবে যদি এটিকে সঠিক উপায়ে চিকিৎসা করা হয়, আশা করি তা সেরে যাবে। আশার কথা হলো, আমাদের শহর ও গ্রামের বৈষম্য এখন কমে এসেছে। এখন পুরো দেশকেই একটা ইউনিট হিসেবে বিবেচনা করে সামগ্রিকভাবে পরিকল্পনা করতে হবে। ঢাকার বাইরে অন্যান্য অঞ্চলেও যেন সুষমভাবে বিনিয়োগ হয় ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়, আমরা সেটি মাথায় রেখে কাজ করব।’
পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং বাংলাদেশ আরবান নলেজ হাব যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ঢাকাকে উদ্ধার করতে হলে মফস্সলের পুনর্জাগন হতে হবে। পুনর্জাগরণটি অর্থনৈতিকভাবেও হতে হবে। খুলনা ও বরিশাল শহরে মানুষ কমছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ না করে শুধু সুন্দর শহর গড়লে সেই শহর কাজে আসবে না।
অনুষ্ঠানে এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির আরবান এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক এ টি এম নুরুল আমিন বলেন, ‘ঢাকাকে রক্ষা করার জন্য নিউ টাউনশিপ দরকার। “ঢাকা ডেলিরিয়ামে” ঢাকার যে প্রলাপ শুনতে পাচ্ছি, তা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। এতে বিভিন্ন আঙিকে ঢাকা শহরের সমস্যা-সম্ভাবনাকে উপস্থাপন করা হয়েছে।’
বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কাজী খালেদ আশরাফ বইটি সম্পর্কে বলেন, বই প্রকাশ খুবই আনন্দের ব্যাপার, আর যদি তা ঢাকা নিয়ে হয় তবে তা আরও বেশি আনন্দের। এই নগর সম্পর্কে অতীতে অনেকে লিখেছেন। তবে আদনান মোর্শেদের বইটি ভিন্ন। কারণ, এর প্রতিটি লেখা বাস্তবিক অভিজ্ঞতার আলোকে এবং তা মানুষকে স্পর্শ করবে।
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, আদনান মোর্শেদ যেভাবে ঢাকা শহরকে ব্যাখ্যা করেছেন ও প্রাঞ্জল ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন, সেটি ভবিষ্যতের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য দলিল হয়ে থাকবে।
একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, চরিত্র বিশ্লেষণ করলে মনে হচ্ছে, ঢাকা এখন বহু চরিত্রের সংমিশ্রণ। এই শহর অনেক বড় হয়ে গেছে। সময় ও চাহিদার অনুপাতে এখানে নানা কিছু তৈরি হয়েছে। তবে এখনো নারীদের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়নি।
মোড়ক উন্মোচন করা বইটি সম্পর্কে লেখক আদনান জিল্লুর বলেন, ‘একটা নগরকে বুঝতে হলে তার নিজস্ব চরিত্রকে বুঝতে হবে। গত কয়েক দশকে এককেন্দ্রিক উন্নয়নের ফলে আমরা সবকিছু রাজধানীকেন্দ্রিক করে ফেলেছি, যা ঢাকার ওপর চাপ বাড়িয়েছে। অথচ ঢাকা হতে পারত অন্যতম সুন্দর শহর। এখনো সেই সম্ভাবনা পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। এ জন্য সবার আগে নিজেদের অভ্যন্তরীণ দৃষ্টিভঙ্গির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে, উদ্ভাবনী পরিকল্পনায় জোর দিতে হবে।’
স্পেনভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থা অলট্রিম পাবলিশার্স ‘ঢাকা ডেলিরিয়াম’ বইটি প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত আদনান জিল্লুর মোর্শেদের অর্ধশতাধিক লেখা এতে স্থান পেয়েছে।
বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের আগে ‘জনঘনত্বই হতে পারে ঢাকার আশীর্বাদ’ শিরোনামের একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, ফরহাদুর রেজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।