close(x)
 

	
	
	

শিক্ষক দিবস: শিক্ষক নিয়োগে ধীরগতি, প্রশিক্ষণে ঘাটতি

by Education Published: October 5, 2023

দেশের প্রাথমিক স্তর থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক দিন ধরে শিক্ষকসংকট চলছে। নিয়োগে ধীরগতির কারণে একটি নিয়োগ শেষ হতে না হতে বছর চলে যাচ্ছে। এতে নিয়োগপ্রক্রিয়া চলমান থাকলেও শিক্ষকসংকট কাটছে না। একই সঙ্গে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না থাকায় কাঙ্ক্ষিত মানের পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না।

৩৮ হাজার শূন্যপদ নিয়ে চলছে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর-মাউশির আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় দুই হাজার শিক্ষক পদ শূন্য। আবার গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন শিক্ষক অবসরে যাচ্ছেন। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ৭০ শতাংশ শিক্ষকের পদ ফাঁকা।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহামদ বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগে আগে দুই বছর সময় পার হয়েছে। সারা দেশে একসঙ্গে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কারণে বাড়তি কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়। প্রতিবছর প্রায় ছয় হাজার শিক্ষক অবসরে যান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, একটি নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ হতে না হতেই পুনরায় সমপরিমাণ পদ শূন্য হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসির মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানা হয়। এসব দিক বিবেচনা করে অধিকতর যাচাই-বাছাই শেষে নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়।

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পদোন্নতির মাধ্যমে আমরা নিচের পদগুলো ফাঁকা করে থাকি। পরে এসব পদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হয়। এবারের পরিকল্পনায় কিছুটা ভুল ছিল, ফলে ফাঁকা পদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। আশা করছি, আগামী দুই বছরের মধ্যে শিক্ষকসংকট আর থাকবে না।’

আজ ৫ অক্টোবর আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। দেশে প্রথমবারের মতো দিসবটি জাতীয় পর্যায়ে পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা পেতে যেমন শিক্ষক চাই : শিক্ষকসংকট ঠেকাতে বৈশ্বিক উদ্যোগ’। অর্থাৎ মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমে প্রশিক্ষণ ঘাটতি

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর-মাউশির আওতাধীন সারা দেশে নিবন্ধিত সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৩ হাজার ৪৩৬। এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা চার লাখ ৪১ হাজার ছয়। নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর এক দিনের অনলাইন ও তিন দিনের সরাসরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই স্তরে আরো ২৮ হাজার ১৯৩টি কিন্ডারগার্টেনে কর্মরত আছেন দুই লাখ ৪৬৭ জন শিক্ষক। এই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন সরকারি ও বেসরকারি মোট এক লাখ ১৫ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন ছয় লাখ ৫২ হাজার শিক্ষক। এর মধ্যে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত তিন লাখ ৯০ হাজার ৪৫ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে ২০ থেকে ৩০ জন শিক্ষকের কয়েকটি ব্যাচ নিয়ে সরাসরি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষক এই প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহীনুর শাহীন খান বলেন, ‘প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হওয়ার এক মাস পার হলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যা বলা যেত। আশা করছি, আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষকদের সরাসরি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ করতে পারব।’

ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মনজুর আহমেদ বলেন, শিক্ষকদের এ ধরনের খণ্ডকালীন প্রশিক্ষণ দিয়ে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব হবে না। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও আইন ইত্যাদি পেশার বিষয়ে যেমন প্রস্তুতি নেওয়া হয়, শিক্ষকতা পেশাকে সেভাবে দেখা হচ্ছে না।

এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘উন্নত দেশসহ প্রতিবেশী অনেক উন্নয়নশীল দেশে বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দ্বাদশ শ্রেণির পর চার বছরের শিক্ষাবিষয়ক কোর্স থাকে। যাঁরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চান, তাঁরা শিক্ষকতার প্রস্তুতি হিসেবে শিক্ষাতত্ত্ব্ব, শিখন-শেখানো ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনা নিয়ে এসব কোর্স করেন। আমাদের দেশে চার বছরের এমন কোনো কোর্স নেই, নিয়োগের আগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নেই।’