close(x)
 

	
	
	

তিস্তার পানিতে নতুন এলাকা প্লাবিত, বাড়ছে পানিবন্দি

by বাংলাদেশ Published: July 14, 2023 পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপরে ওঠে

টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে তিন জেলার এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

পানি নিয়ন্ত্রণে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার।

শুক্রবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার; যা বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরে বেলা ৩টায় পানি কিছুটা কমে ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

পাউবো জানিয়েছে, তিস্তার পানি বাড়ায় জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতিবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, সিন্দুনা, ডাউয়াবাড়ি, গড্ডিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী আদিতমারী উপজেলার মহিষখোছা ও সদর উপজেলা খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যায়। সেইসঙ্গে ডুবে গেছে নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি।

বন্যার্তরা গবাদিপশু নিয়ে উঁচু স্থান ও বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেককেই উঁচু স্থানে চুলা জ্বালিয়ে রান্না করতে দেখা গেছে। নলকূপ ও টয়লেট পানিতে ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট ও স্যানিটেশন সমস্যায় পড়ছেন বন্যার্তরা।

এদিকে সকালে আদিতমারী উপজেলার বারঘরিয়া গ্রামের আব্দার হোসেন (৯০) বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন। কবরস্থানে হাঁটু সমান পানি উঠায় দাফন নিয়ে চিন্তায় পড়েছে তার পরিবার।

একই উপজেলার মহিষখোছার গোবর্ধন এলাকার জামাল মিয়া বলেন, “সকাল থেকেই পানি বাড়ছে, বাড়িঘর ডুবে যাচ্ছে। খুব বিপদে আছি।”

একই গ্রামের মহুবর রহমান বলেন, “সকাল থেকেই পানি হাঁটু সমান। তাই খাটের উপর চুলা তুলে রান্না-বান্নার কাজ করতে হচ্ছে। গরু-ছাগল বাঁধে নিয়ে রাখছি।”

বারঘড়িয়া গ্রামের এলাকার শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, এমনিতেই পানির উপর চলাচল করতে হয়। তার উপর আবার নদীতে পানি বাড়তেছে।

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া নদী শাসন করা অত্যান্ত দুরূহ; দ্রুত এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।

লালমনিরহাট পাউবোর প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, পানি বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে। এতে নদীর পানি আরও বাড়বে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, “আমরা সার্বক্ষণিক বন্যার খোঁজখবর রাখছি। জেলায় দুর্যোগকালীন ৪৫০ টন চাল ও সাত লাখ টাকা বরাদ্দ আছে।

“এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউএনও এবং পিআইওর মাধ্যমে ১১০ টন চাল ‍ও ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করে বরাদ্দ দেওয়া হবে।”

কুড়িগ্রাম: বৃহস্পতিবার থেকে দুধকুমার নদীর পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এতে নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে থাকে। শুক্রবার সকালে পানি আরও বাড়লে ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়।

দুপুর দেড়টার দিকে সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচর গ্রামে গিয়ে গৃহবধূ শাপলার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বামী বাবুল আলী এক সন্তানকে কোলে নিয়ে আছেন, অপর সন্তানটি তার শরীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। আর শাপলা চাল আর কাঁঠালের বিচি ভাজছেন। দুপুরে এই আহারেই তাদের দিন কেটে যাবে। বন্যা হলেই এমন দুর্দশায় পড়তে হয় তাদের।

পাশের দক্ষিণ ভগবতীপুর গ্রামের গৃহবধূ নার্গিস বলেন, “চারদিন থেকে পানিবন্দি হয়ে আছি। কেউ খোঁজখবর নেয় নাই। ঘরের চৌকিতে পানি ওঠায় পাশের উঁচু বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।”

একই গ্রামের প্রায় ৪৫ থেকে ৫০টি বাড়িতে পানি উঠেছে বলে জানান তিনি।

নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের চর কাফনা গ্রামের নুর বখত বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে পানির চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নিচু এলাকার ঘরবাড়িতে পানি ঢুকতে শুরু করে। লোকজন গবাদিপশু নিয়ে বিপদে পড়েছেন।

এই গ্রামের গৃহবধূ নাজমা বলেন, “চারদিকে পানি থাকায় ঠিকমত রান্নাবান্না করতে পারছি না। ছেলে-মেয়েদের ভালোমন্দ কিছু খাওয়াতেও পারছি না।”

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বেলা ৩টায় দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি ২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে তিস্তা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারীতে ৩৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে এসব নদীর পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে চরাঞ্চল এবং নদীর তীরবর্তী নিচু অঞ্চলে বসবাসরত প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দাবি করেছেন।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পানি আরও ৩ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। তারপর নেমে যাবে। এ জেলার আওতায় কোনো বাঁধ এখনও ডুবে যায়নি।

তবে নাগেশ্বরী উপজেলায় একটি সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে; সেটির দুটি অংশ প্লাবিত হয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে বলে জানান তিনি।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, বন্যাকবলিত এলাকার জন্য এরই মধ্যে ৬৫ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৫৮৫ টন চাল, ১০ লাখ টাকা ও ১ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে। বন্যার্তদের তালিকা করা হচ্ছে, তালিকা পেলে বরাদ্দ দেওয়া হবে।

শুক্রবার বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।