সব গুমের জবাবদিহিতা চায় যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে বলপূর্বক গুমের সব ঘটনার তদন্ত ও জবাবদিহিতার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ফেসবুক পেইজে এক পোস্টে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ‘মায়ের ডাক’ এর সাথে তার বৈঠকের সমাপ্তি টেনেছেন। জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মায়ের ডাক গঠিত হয়েছে। গত ১৪ ডিসেম্বর শুরু হলেও বৈঠকটি অপ্রত্যাশিতভাবে স্থগিত করা হয়েছিল।

এতে বলা হয়, প্রত্যেক মানুষের মানবাধিকার, স্বাধীনতা ও মর্যাদা সুরক্ষার পক্ষে দাঁড়াতে পেরে আমরা গর্বিত। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস মায়ের কান্নাসহ বহু সংস্থার সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করেছে। আমরা যেকোন সংশ্লিষ্টতা নির্বিশেষে সব ভুক্তভোগীর কথা শোনার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা বলপূর্বক গুমের সব ঘটনার তদন্ত ও জবাবদিহিতার আহ্বান জানাই।

রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত ১৪ ডিসেম্বর ঢাকার শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাড়িতে মায়ের ডাক সংগঠনের সদস্যদের সাথে বৈঠক শেষে বের হয়ে আসার সময় ‘মায়ের কান্না’ ব্যানারে একদল মানুষ তাকে ঘিরে ধরে স্মারকলিপি দেয়ার চেষ্টা করে। রাষ্ট্রদূত দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের সাথে দেখা করেন এবং ঘটনার ব্যাপারে তার উদ্বেগের কথা জানান। পরবর্তী সময়ে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের সাথে বৈঠকে পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানান মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। এ ছাড়া ওয়াশিংটনে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে শাহীনবাগের ঘটনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখ্য উপ-মুখপাত্র প্যাটেল জানিয়ে ছিলেন, আমরা বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ ব্যাপারে আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্র তার মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। স্বাধীন গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে কোনো ঘাটতি দেখা দিলে আমরা বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অন্যতম উপাদান মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখার বিষয়টি উত্থাপন করি।

সাজেদুল ইসলাম সুমন ২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তার পরিবারের দাবি, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সুমনকে তুলে নিয়ে গেছে। সুমনের বোন ‘মায়ের ডাক’ নামে সংগঠনের আহ্বায়ক, যারা গুমের ঘটনাগুলোর বিচার চেয়ে আসছে। অন্য দিকে ১৯৭৭ সালে তৎকালীন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের আমলে কোর্ট মার্শালের স্বীকার ব্যক্তিদের জন্য যথাযথ বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে ‘মায়ের কান্না’।
বুধবার সকালে রাজধানীর বারিধারায় আমেরিকা সেন্টারে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাথে সাক্ষাৎ করেন মায়ের ডাক সংগঠনের সদস্যরা। এ সময় সংগঠনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলামসহ নিখোঁজ প্রায় ২০ জনের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পিটার হাস ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর কথা জানতে চান। বর্তমান পরিস্থিতি কী? কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গুম হওয়া পরিবারগুলো যাচ্ছে- এসব নিয়ে আলোচনা হয়। পিটার হাস জানান, বলপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান রয়েছে। এগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মধ্যে থাকবে।

নয়া দিগন্ত

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *